কক্সবাজার ভ্রমণের কিছু টিপস
সারি সারি ঝাউবন। বালুর নরম বিছানা। সামনে বিশাল সমুদ্র। নীল জলরাশি আর শোঁ শোঁ গর্জনে মেশা মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকতের নাম কক্সবাজার। অপরূপ সুন্দর বিশ্বের বৃহত্তম এই সমুদ্র সৈকতে যারা সপরিবারে বেড়াতে চান তাদের জন্য এই লেখা।
- কতদিন থাকবেন, কোথায় কোথায় থাকবেন / বেড়াবেন তার পূর্ণাঙ্গ গাইড ও তথ্য জেনে নিন।
- অফ সিজনে বেড়াতে গেলে যাত্রার পূর্বে রেইন কোট, ছাতা সঙ্গে রাখুন।
- টর্চ, ব্যাটারি, মোবাইল চার্জার, পানির বোতল, টুপি, হাফপ্যান্ট, ট্রাউজার, সানগ্লাস সঙ্গে রাখুন।
- আগেই পরিবহন ও যাতায়াতের ব্যবস্থাসহ বাসস্থানের পরিপূর্ণ ঠিকানা ফোন নম্বর ও মোবাইল নম্বর জেনে নিন।
- সঙ্গে রাখতে পারেন ক্যামেরা ও বাইনোকুলার।
- ছোট হ্যান্ডব্যাগ, মানিব্যাগ, মোবাইল সযতনে রাখুন।
- জেনে নিন খাবার মেন্যু ও মূল্য, থাকার ভাড়া সম্পর্কে। এছাড়া পরিবহন খরচের ব্যাপারে আগেই স্বচ্ছ ধারণা নিন।
- কেনাকাটায় সতর্ক থাকুন। আগেই গাড়ির সিট বুক করে রাখুন।
- নিরাপত্তার জন্য হোটেলের ভিজিটিং কার্ড, মোবাইল নম্বর ছাড়াও স্থানীয় পুলিশ ও বিচ পুলিশ ফাঁড়ির ফোন ও লাইফ গার্ডের নম্বরসমূহ সঙ্গে রাখুন। কোনো রকম বিপদের আশঙ্কা দেখা দিলেই হোটেল কর্তৃপক্ষ ও কর্তব্যরত পুলিশের সহায়তা নিন।
- বিচের উঁচু নিচু এলাকা সম্পর্কে সতর্ক হোন। প্রয়োজনে ভাটার সময় গিয়ে বিচের উঁচু নিচু এলাকা দেখে আসুন। কেননা জোয়ারের সময় এসব এলাকা পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। ভাটার টানে নিচু এলাকায় পড়ে অনেকে তীরে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হন। তাই অনাকাক্সিত দুর্ঘটনা এড়াতে লাইফ গার্ডসহ স্থানীয়দের পরামর্শ মেনে চলুন।
- একাকী ভ্রমণের চেয়ে দলগতভাবে ভ্রমণ বেশ আনন্দদায়ক। এক্ষেত্রে দলের সঙ্গে থাকুন। বিচ্ছিন্ন হয়ে চলাচল না করাই উত্তম। এতে খরচও বেশি হয়।
- প্যাকেজ ট্যুরের ব্যাপারে ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে বিস্তারিত জেনে নিয়ে তবেই বুকিং দিন। কোনো সমস্যা দেখা দিলে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এদের অফিসের মোবাইল ও গাইডের নম্বর সংরক্ষণ করুন।
ঢাকা থেকে ৪১৪ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫২ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজারের অবস্থান। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার যেতে পারেন। পাশাপাশি ঢাকা থেকে প্লেনেও চট্টগ্রাম নেমে বাসে বা মাইক্রোতে কক্সবাজার পৌঁছানো যায়। সবচেয়ে ভালো হোলও সরাসরি বাসে বা প্লেনে করে কক্সবাজার যাওয়া।
এখানে থাকার জন্য রয়েছে আন্তর্জাতিকমানের পাঁচতারা সুবিধার হোটেল ছাড়াও ছোট-বড় অনেক মোটেল, রেস্ট হাউস বা বোর্ডিং। শীত মৌসুমে যারা কক্সবাজার ভ্রমণে যেত চান তাদের আগেভাগেই হোটেলের সিট বুক করা ভালো। দুভাবে হোটেল বুক করা যায়। প্রথম সরাসরি গিয়ে কিংবা আগে ফোনে যোগাযোগ করে তারিখ জানিয়ে অনলাইন ব্যাঙ্কিং বা মোবাইল ব্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে। এছাড়া কোনও ট্রাভেল কোম্পানি কে বললে তারা ও হোটেল বুকিং এর ব্যাবস্থা করে দিবে।
কক্সবাজার শহর থেকে বন্দর মোকাম পর্যন্ত প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুবই ছোট মনে হলেও সাগরের বিশালতা দেখে মনটা বিশাল হয়ে যাবে।
বিশাল সাগরের বুকে দৃষ্টি দিলে চোখে পড়বে শুধু পানি আর পানি। আছড়ে পড়া ঢেউ, সমুদ্রের গর্জন আর নীল জলরাশি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। দূরে ভাসমান জেলে নৌকা, বিকেলে সূর্যাস্ত দেখার এ এক অন্যরকম মজা। অন্যরকম শিহরণ! অনেক রকম বিনোদন ও ভ্রমণ আয়োজন যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
প্রবাল, শামুক, ঝিনুক আর এসব সামুদ্রিক পণ্যের তৈরি নানা সামগ্রী পর্যটকদের জন্য বাড়তি পাওয়া। কম মূল্যে শামুক ও ঝিনুকের মালা, বার্মিজ ও বাংলাদেশী পণ্য, আচার আর হরেক রকম বিদেশী পণ্যের জন্য বিখ্যাত এই শহর।
সামুদ্রিক মাছ ও মাছের মজাদার রেসিপি যেকোনো পর্যটককে রসনা তৃপ্তি দেবে। চান্দের গাড়িতে ঘোরার পাশাপাশি চাঁদের আলোয় বালুকা বেলায় ঘোরার জন্য কক্সবাজারই সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান।
এসবের পাশাপাশি বৌদ্ধ বিহার ও উপজাতীয় মানুষের জীবনাচার দেখা, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ ও জেলে পল্লী মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো, রাখাইনদের হাতে তৈরি পণ্য কেনা, স্পিডবোটে জার্নি কিংবা মহেশখালীর পাহাড়ের উপরে ৬০০ বছরের বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির দর্শন, মহেশখালীর মজাদার পানের স্বাদ গস্খহণ সবই সম্ভব একমাত্র কক্সবাজারে।
এছাড়া কুতুবদিয়া ও সোনাদিয়া দ্বীপে ভ্রমণ, পাহাড়, সমুদ্র, বন ও লেকের নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগের সুযোগ শুধু কক্সবাজারেই আছে। এবার জেনে নিন তার কিছু তথ্য।
হিমছড়ি
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পথ ধরে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে প্রকৃতির এক বিচিত্র সৌন্দর্যে ভরপর হিমছড়ি। সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে নয়নাভিরাম ঝর্নাধারা আর পাহাড় ও সাগরের মিতালি দেখতে হলে আপনাকে হিমছড়ি আসতেই হবে। বর্তমানে এখানে বেশ কয়েকটি ছোটখাটো খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে।
সুউচ্চ পাহাড় দেখে যাদের উপরে ওঠার সাধ তাদের জন্য রয়েছে বিশাল সিঁড়িপথ। উপরে বিশ্রামাগার। এখানে প্রবেশের জন্য ২০ টাকা টিকেট কাটতে হয়। শীত মৌসুমে ৬০০-১২০০ টাকায় প্রতিদিন কক্সবাজার থেকে অসংখ্য চাদের গাড়ি কিংবা সিএনজি, অটোরিকশায় যাওয়া যায়।
অফিসজনে ভাড়া পড়ে রিজার্ভ সিএনজি ৪০০-৬০০ টাকায়। একক বা রিজার্ভ করেও যাওয়া যায়। তবে দলবেঁধে গেলে খরচ কম পড়ে। হিমছড়িতে দাঁড়িয়ে দিগন্ত বিস্তৃত নীল সাগরের ঢেউ, পাহাড়ের পার ঘেঁষে সারি সারি ঝাউবন আর নৈসর্গিক দৃশ্য দেখার জন্য হিমছড়ি আপনাকে সারা বছর স্বাগত জানাবে।
ইনানি বিচ
কক্সবাজারের অন্যতম সুন্দর সমুদ্র সৈকত ইনানি। শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দক্ষিণে উখিয়া থানায় এবং হিমছড়ি থেকে প্রায় ২০-২১ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। যারা হিমছড়ি দেখতে যেতে চান তারা একই সঙ্গে ইনানির নৈসর্গিক দৃশ্যাবলীয়ও উপভোগ করতে পারেন।
পার্কিংয়ের জন্য ২০ টাকা করে প্রদান করতে হয়। এখানে থাকার জন্য রয়েছে দুটি ভালো মানের হোটেল। ইনানি সৈকতের পশ্চিমে মূল সমুদ্র সৈকত। পূর্বদিকে সুউচ্চ পাহাড় ও সমতলভূমি। বিস্তৃত সৈকতে অসংখ্য প্রবাল পাথরের সমারোহ। অসংখ্য বন্যপ্রাণী ও পাখির সমারোহ রয়েছে এই এলাকাটিতে। বেশ কিছু মৎস্য হ্যাচারি আর স্থানীয় এক ধরনের ফল পর্যটকদের মুগ্ধ করবে। এখঅনের সুস্বাদু ডাব আর স্থানীয় ছুপড়ি দোকানের চা বাড়তি পাওনা।
মহেশখালী
কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে সাগরের মাঝে অবস্থিত একটি দ্বীপ মহেশখালী। মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়িয়া দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। নৌকা, লঞ্চ বা স্পিডবোটে অল্প সময়েই এখানে পৌঁছানো যায়। প্রতিদিন সকাল বিকেলে কক্সবাজার বাহার ছড়া ঘাট থেকে মহেশখালী যাওয়া যায়।স্পিডবোটে ৬৫ টাকা এবং ট্রলার জাতীয় নৌকায় জনপ্রতি ২০ টাকায় পৌনে এক ঘণ্টায় মহেশখালী যাওয়া যায়। মহেশখালীতে রয়েছে হিন্দুদের তীর্থস্থান বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এ মন্দির সারা বিশ্বের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র স্থান। প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো এ প্রাচীন সভ্যতা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন।
নেপালের রাজদরবারের বদান্যতায় ও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় এটি নতুন রূপ ধারণ করেছে। এখানে দেখার জন্য কোনো প্রবেশমূল্য লাগে না। পাশাপাশি জুমিয়া, মগ আর রাখাইনদের হাতে তৈরি পোশাক ও তৈজসপত্র এখানে পাওয়া যায়।
এছাড়া শিবমন্দির দর্শন, মৎস্য শিকার আর সংখ্যালঘু মগদের জীবন যাপনে খুব কাছ থেকে দেখতে অনেকেই মহেশকালী ভ্রমণ করেন থাকেন। এখানে খাবারের জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল থাকলেও থাকার জন্য ভালোমানের তেমন কোনো হোটেল নেই।
ঝিনুক মার্কেট
পর্যটকদের আরেকটি আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে ঝিনুক মার্কেট। সৈকত সংলগ্ন রেস্ট হাউসের উত্তর-পূর্ব কোণায় এবং লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলি তিন পয়েন্টেই ঝিনুক মার্কেট অবস্থিত। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ এর মতো দোকান রয়েছে এখানে। শামুক বা ঝিনুকে নাম লেখানো, স্টুডিও, খাবার দোকান, কেনাকাটা সব সুযোগ ঝিনুক মার্কেটে রয়েছে।
উপকূলবর্তী এলাকার লোকজন বিভিন্ন ধরনের ঝিনুক ও প্রবাল কুড়িয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। এর মধ্যে কাটা শামুক, শঙ্খ কড়ি, প্রবাল, শামুক, ঝিনুক, মুক্তা, মুক্তার প্লেট ইত্যাদি নানা রূপে নানা ঢঙে ক্রেতার কাছে উপস্থাপন করা হয়। বিভিন্ন ধরনের মাছ, নামফলক, গলার মালা, কানফুল, চাবির রিং, হাতের চুড়ি, বালাসহ নারীদের নানা ধরনের পণ্য এখানে কিনতে পাওয়া যায়।
বার্মিজ মার্কেট
পর্যটকদের আকর্ষণীয় কেনাকাটার স্থান কক্সবাজারের বার্মিজ মার্কেট। কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়া অংশে বেশ কয়েকটি ভবনে এ মার্কেট অবস্থিত। এখানে কয়েকশ দোকানে আকর্ষণীয় সব জিনিসপত্র বিক্রি করা হয়, যা পর্যটকদের প্রলুব্ধ করে।
বার্মা, থাইল্যান্ড, ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানিকৃত এসব পণ্য কেশ কম দামে কেনা যায়। বার্মিজ মার্কেটের দোকানগুলোতে অধিকাংশ বিক্রেতাই রাখাইন তরুণী। এসব রাখাইন তরুণী মুখমন্ডলে মাখে সাদা চন্দন। পরনে থাকে বার্মিজ থামি এবং ব্লাউজ।
এখানে রাখাইনদের হাতে তৈরি নানা ধরনের পোশাক পাওয়া যায়। বার্মিজ স্যান্ডেল। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, চন্দন, পাখা, হরেক রকমের বার্মিজ আচার, হাতির দাঁতের তৈরি তৈজসপত্র, কানের দুল, চুড়ি, কুটির শিল্প, কাঠের ফ্রেম ও গহনা বাক্স ক্রেতাদের আকর্ষণ করে।
ইদানীং শহরের বিভিন্ন এলাকায় বার্মিজ মার্কেট গড়ে উঠেছে। নামে বার্মিজ হলেও এখানে অনেক পণ্যই বাংলাদেশের তৈরি। তবে ক্রেতাদের ভালোমতো দরদাম করে এসব পণ্য কেনা শ্রেয়। কথায় প্রলুব্ধ না হয়ে যাচাই-বাছাই করে পণ্য কেনা উচিত।
বিচ বাইক
জেট স্কি
বিচের অন্যতম আকর্ষন খোলা সাগরে জেট স্কি চালানো। উত্তাল ঢেউ এর উপর দিয়ে চালিফে চলার এক রোমাঞ্চকর অনুভুতি পাওয়া যায়। রাউন্ড প্রতি ২০০-৫০০ টাকা।
বাস সার্ভিস, পরিবহন ও ভাড়া
যারা ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যেতে চান তারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার অথবা সরাসির বাসে কক্সবাজারে যেতে পারে। ঢাকার ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিলসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সরাসরি কক্সবাজারের উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়।
এসি ও নন এসি, ডিলাক্স ও সাধারণ এসব সরাসরি বাস পরিবহনের ভাড়া পড়বে ৮০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত। সোহাগ, গ্রীন লাইন, শ্যামলী, টি আর ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস, রিল্যাক্স, হানিফ, সেন্ট মার্টিন পরিবহন ছাড়াও ইউনিক, এনা ও অন্যান্য পরিবহনের বাস চলাচল করে। এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে প্রথমে চট্টগ্রাম এবং পরে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কক্সবাজারে যাওয়া যায়। ঢাকার কমলাপুর থেকে প্রতিদিন ট্রেন বা বাস ছেড়ে যায়। তবে টিকেট বুকিং আগেভাগেই করে রাখা ভালো।
কক্সবাজারের আবাসিক ব্যবস্থা
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও দর্শনীয় বিচ কক্সবাজারে রয়েছে আন্তর্জাতিকমানের বেশ কয়েকটি হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট। এছাড়া সরকারি ও ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় গড়ে উঠেছে ছোটখাটো মানের বেশ কিছু রিসোর্ট, হোটেল ও বোর্ডিং হাউস। সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭০,০০০ টাকায় কক্সবাজারে রাতযাপন করা যায়। হোটেল রেস্টহাউসের ভাড়া প্রায়ই নির্ধারিত। তবে কক্সবাজার ভ্রমণের পূর্বে ফোনে যোগাযোগ করে বুকিংমানি পাঠিয়ে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ভালো। সরাসরি গিয়েও কথা বলে রুম ভাড়া নেওয়া যায়।
খাবার দাবার ও রেস্টুরেন্ট
প্রায় প্রতিটি আবাসিক হোটেল বা হোটেলের সন্নিকটে রেস্টুরেন্ট বা খাবার হোটেল রয়েছে। কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়ে পর্যটকদের বেশি আকর্ষণ থাকে সাগরের বিভিন্ন মাছের মেন্যুর প্রতি। বিশেষ করে চিংড়ি, রূপচাঁদা, লাইট্যা, ছুরি মাছসহ মজাদার শুটকি মাছের ভর্তার প্রতিই পর্যটকদের আকর্ষণ বেশি থাকে।
খাবারের মেন্যু অনুযায়ী একেক রেস্টুরেন্টে একেক ধরনের মূল্য তালিকা দেখা যায়। তবে বর্তমানে সরকার নির্ধারিত কিছু কিছু তালিকা ভোজন রসিকদের আশ্বস্ত করেছে। মোটামুটি ২০০-৫০০ টাকার মধ্যে সাধ ও সাধ্য অনুযায়ী মজাদার খাবার গ্রহণ করতে পারবেন।
তবে খাবার গ্রহণের পূর্বে খাবারের নাম, মূল্য এবং তৈরির সময় সম্পর্কে জেনে নিন। প্রয়োজনে খাদ্যের তালিকা ও মূল্য টুকে রাখুন। বিলের সঙ্গে মিলিয়ে বিল প্রদান করুন।
বিচ ফটোগ্রাফি
কক্সবাজারে পর্যটন মৌসুমে ২৫০-৩০০ বিচ ফটোগ্রাফার পর্যটকদের ছবি তুলে থাকে। প্রায় ঘন্টা খানেকের মধ্যেই এসব ছবি প্রিন্ট করে নেগেটিভসহ পর্যটকদের হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা রয়েছে। লাল পোশাক পরা এসব বিচ ফটোগ্রাফারদের প্রত্যেকের রয়েছে একটি করে আইডি কার্ড। বেশ কয়েকটি স্টুডিও এ কাজের সঙ্গে জড়িত।
সরকারি রেট অনুযায়ী ৩আর সাইজের ছবি ১২ টাকা হলেও পর্যটকদের থেকে ১৫ টাকা করে নেওয়া হয়ে থাকে। এ সম্পর্কিত সাইনবোর্ড মেইন বিচে দেখতে পাওয়া যায়। এসব বিচ ফটোগ্রাফারদের কাছ থেকে ছবি তোলার আগে আইডি কার্ড দেখে নেওয়া ভালো।
আপনার সাথে যদি ম্যামরি কার্ড থাকে তাহলে ওরা আপনার ম্যামরি কার্ড ব্যাবহার করে ছবি তুলে দিবে, এতে প্রত্যেক ছবির জন্য ৫ টাকা করে নিবে।
শুটকি ও শুটকি বাজার
যারা কক্সবাজার ভ্রমণে যান তাদের অনেকেরই শুটকি কেনার প্রতি আগ্রহ থাকে। সবচেয়ে দামি ও সুস্বাদু স্যামন মাছ ছাড়াও কোরাল, সুরমা, রূপচাঁদা, ছুরি, লাইট্যা, ভেটকি, ইলিশ, বাঁশপাতা মাছের শুটকি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। বড় বাজার ও বার্মিজ বাজার সংলগ্ন কয়েকটি দোকানে এসব মাছ কিনতে পাওয়া যায়।এসব দোকানে ১২-১৫ মণ ওজনের মাছ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র মলা মাছ পর্যন্ত পাওয়া যায়। সবচেয়ে দামি মাছ স্যামন। এটি কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ১০০০-১১০০ টাকা পর্যন্ত। টাটকা ও কাঁচা মাছ কেনার জন্য বড় বাজারে যেতে পারেন। এটি বাহারছড়া এলাকায় অবস্থিত। বেশি পরিমাণে শুটকি কিনতে চাইলে স্থানীয় শুটকি ব্যবসায়ীদের চাতালে গিয়ে কিনলে দাম খুবই কম পড়বে। সবচেয়ে বড় শুটকির বাজার চট্টগ্রামে অবস্থিত।
সমুদ্রে নামার আগে সতর্কতা
সমুদ্রে নামার আগে অবশ্যই জোয়ার-ভাটার সময় জেনে নিন। এ সম্পর্কিত লাইফ গার্ডের বেশ কয়েকটি সাইনবোর্ড ও পতাকা রয়েছে বিচের বিভিন্ন স্থানে। জোয়ারের সময় সমুদ্রে গোসল বা স্নানে নামা নিরাপদ। এ সময় তাই জোয়ারের সময় নির্দেশিত থাকে, পাশাপাশি সবুজ পতাকা ওড়ানো হয়।
ভাটার সময়ে সমুদ্রে স্নান বিপজ্জনক ভাটার টানে মুহূর্তেই হারিয়ে যেতে পারে যে কেউ। তাই এ সময় বিচ এলাকায় ভাটার সময় লেখাসহ লাল পতাকা ওড়ানো থাকলে সমুদ্রে নামা থেকে বিরত থাকুন। কোনোভাবেই দূরে যাবেন না। প্রয়োজেন পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ইয়াছির লাইফ গার্ডের সহায়তা নিন। ওদের জানিয়ে বিচে নামুন।
Nice article, hope to see more articles like this
ReplyDeleteThanks
Delete