Coxs Bazar Diary 2019 | কক্সবাজার ডায়েরী ২০১৯ – বড় ভাইদের সাথে মাস্তি, আড্ডা, টিমবিল্ডিং
ট্যুরে গেলেই যে মানুষটার রোষানলে পরতে হয় সেই বড় ভাই যদি দেশে অবস্থান করে তাহলে তো একটা ট্যুর না দিলে পাপ হবে...
চাঁদপুর ট্যুরের পরেই প্ল্যান ছিলো এপ্রিলে আরেকটা ট্যুর হবে। হিমেল এর উপর দায়িত্ব ছিলো ট্যুর এর প্ল্যান করার। ভাই করি করি করতে করতে একবার গেলো বরিশাল আরেকবার সোলো ট্যুর এর নাম করে তিন জন নিয়ে শেরপুর+জামালপুর। কিন্তু আমাদের ট্যুরের কোনও খবর নাই। নাহিদ ভাই এর সাথে কথা বলে হিমেল এর চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেরাই প্ল্যান করে ফেললাম কক্সবাজার যাবো, সম্পুর্ন রিল্যাক্স ট্যুর। আমি, নাহিদ ভাই, রাসেল ভাই আর বহু কাঙ্খিত সেই সাফিউল ভাই। যাত্রার তারিখ ঠিক হলো এপ্রিল এর ২৪ তারিখ, বুধবার রাতে যাবো, যেহেতু সবাই বৃহস্পতিবার রাতে যায় কাজেই বৃহস্পতিবার আমরা মোটামোটি ফ্রি পাবো। কিন্তু ভেজাল লাগালো পরিবহন ধর্মঘট। ২৪ এপ্রিল রাতে কোনও বাস ছাড়বেনা। পুরো প্ল্যান এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেলো। কথায় বলে না যা হয় ভালোর জন্যই হয়, পিছিয়ে যাওয়াতে হিমেল সহ আরো চার জন যোগ দিলো আমাদের সাথে। বাড়তি পাওয়া ঝড়ো পরিবেশ। প্রথমে মনে হইছিলো জীবনটা বেদনা, মাত্র চার জন যাচ্ছি, পরে দেখা গেলো জীবনটা পুরাই বিনোদন। বিনোদন এর ও একটা লিমিট থাকে, আমাদের কোনও লিমিট ছিলো না।
মে মাসের এক তারিখ রাতের ৯:৫০ এর বাসে যাত্রা শুরু হবে। অভিজ্ঞ নাহিদ ভাই সবাই কে বাসের টাইম বলে দিলো ৮ টা। আমি পুরাই নীরব হয়ে গেলাম। যাদের ব্যাপারে চিন্তা করা হচ্ছিলো দেরি করে আসবে তারা সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৮ টার আগে হাজির। আমি কি আর আমার ফোন তখন অন রাখি? আমার বাসা থেকে কাউন্টার মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা, আমি যাবো ৯:৩০ টার সময়। কিন্তু প্যারা খেয়ে ৯:০০ টার সময় চলে গেলাম। বাস একদম সময় মতো চলে আসলো। যাত্রা শুরুর আগেই আড্ডাবাজী খাওয়া দাওয়া শুরু হয়ে গেলো। সময় মতো যাত্রা শুরু। দোয়া করতে গেলাম মেঘনা আর দাউদকান্দি তে যেনো জ্যামে না পরি, কিন্তু লাভ হলো না। জ্যামে পরতেই হলো কিন্তু তার থেকে বেশি ভোগালো দুটি ট্রাকের সংঘর্ষ। কুমিল্লা আর চট্টগ্রামে দুটি বিরতে নিয়ে ১০:০০ টার সময় কক্সবাজারে প্রবেশ করলাম। ডলফিন মোড়ে বাস থেকে নেমেই বুঝলাম সাগর উত্তাল থাকলেও গরম কাকে বলে, কতো প্রকার ও কি কি? নির্ধারিত হোটেলে রুম বুঝে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঝাউবন রেস্তোরায় চলে গেলাম নাস্তা করতে। নাস্তা করেই গরমের ......... উপেক্ষা করে চলে গেলাম সুগন্ধা বিচে। সাগরের অবস্থা পর্যালোচনা করে চলে আসলাম হোটেলে।
সবাই রুমে চলে গেলো, আমি অপেক্ষা করেত লাগলাম ওয়ান অ্যান্ড ওনলি স্বপন দা এর জন্য, যিনি সব সময় কক্সবাজার থেকে আমাকে আমার ট্যুরের এবং আমি যাদের জন্য ট্যুর এর ব্যাবস্থা করি তাদের হাসিমুখে সাপর্ট দিয়ে থাকে। স্বপন দা এর সাথে কিছু ব্যাবসায়িক আলোচনা করে রুমে গিয়ে বিছানায় চিৎপটাং। দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেলেও এই গরমে হোটেল এর এসির ঠান্ডা বাতাস ছেড়ে বের হতে মন চাচ্ছিলোনা। বড় ভাই দের ঝাড়ি খেয়ে গেলাম লাঞ্চ করতে। এসির বাতাসে লাঞ্চ করবো তাই চলে গেলাম নিরিবিলি রেস্তোরায়।
ভরপেট লাঞ্চ করে চলে গেলাম বিচে আড্ডাবাজি আর মাস্তি করার জন্য। এর মাঝেই ভার্সিটির ছোট ভাই দেড় দুইটা গ্রুপ এর সাথে দেখা করার প্ল্যান করে ফেললাম। প্রথম দিন বিকালেই সানজিত, মাশরুর, অমিত দেখা করতে চলে এলো এবং জানালো পরের দিন থেকে ওরা আমাদের সাথেই থাকবে ঘোরাঘুরি করা জন্য। ধুমছে চলল আড্ডা, ছবি তোলা, মাস্তি, হিমেল কে টিপস দেয়া (!!!), ফেসবুক লাইভে যাওয়া, আরো কতো কি (বলা যাবে না, আমরা ভালো ছেলে)। সন্ধার পর সি ফুড খেয়ে চলে আসলাম হোটেলে। এরপর বড় ভাইদের রুমে গিয়ে আড্ডা।এই ননস্টপ আড্ডাটাই ছিলো এইবারের ট্যুরের মূল প্রাণ। অসময়ে লাঞ্চ, ভরপেট সি ফুড খাওার পর কোনোমতে রাতের খাবার টা খেলাম সবাই। খাওয়া শেষে আবার বিচে গিয়ে আড্ডা। আড্ডা আর কই, একটু পর দেখি সবাই ঘুম। ১২:০০ টার দিকে সবাই রুমে চলে আসলাম তবে কোনও এক রহস্য জনক কারনে হিমেল থেকে গেলো। রুমে এসে বিছানায় শোয়া মাত্র কখন চোখ লেগে আসলো বলতে পারব না, ঘুম ভাংলো জানালায় কে যেনো বাড়ি মারছে, চোখ খুলে দেখি ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। হঠাত মনে হলো হিমেল বাবু তো বিচে ঘুমাচ্ছে, মানবতা আজও বেচে আছে (!!!) তাই তাকে ফোন দিলাম, বেচারা ভিজে ভিজে হোটেলে ফিরতেছে (ভাল হইছে)। এর পর আবার গভীর ঘুম.........
পরের দিন সকালেই ঘুম ভাংলো, রাতের বৃষ্টির কোনও চিহ্নই নেই। সবাই ঘুম, আমি নাহিদ ভাই, রাসেল ভাই মিলে চলে গেলাম সি-গাল এর ঝাউবন দিয়ে লাবনী পয়েন্টে। একটা টিভি চ্যানেল এর ক্যামেরা ম্যানকে দেখলাম খুব মনোযোগ দিয়ে একটা যায়গার ভিডিও করছে, বুঝলাম আজকে পাবলিক কে কিছু একটা স্পেসাল খাওয়ানো হবে। পরে সন্ধার খবরে দেখলাম ঠিকি খাওয়াইয়া দিছে। যাই হোক, লাবনী পয়েন্টে থাকতেই বুঝলাম আমাদের তিনজনেরই খিদা লেগেছে, সবাই ঘুমাক আমরা নাস্তা করে ফেললাম বিচের সামনে একটা ছাপরা হোটেলে।
এর মধ্যেই শ্রদ্ধেয় বড় ভাই এর ফোন, তোরা কই? খিদা লাগসে নাস্তা করবো। আমরা কি আর বলি যে আমরা নাস্তা করতেছি, ওদেরকে বললাম নাস্তা করার জন্য চলে যেতে আমরা বিচ থেকে আসতেছি। নাস্তা করে রুমে চলে গেলাম, একটু পর পুলে ঝাপাঝাপি হবে কাজেই একটু বিশ্রাম দরকার। এরই মধ্যে নাসিফ, সানজিত, মাশরুর, অমিত চলে এসেছে, ওরাও ঝাপাঝাপির জন্য রেডি। বাইরে ঠাডা গরম আর সবাই পুলের পানিতে, লাফালাফি ঝাপাঝাপি করে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে সবাই বিছানায়। সাথে চলল তামিল সিনেমা। বিশেষ করে হিমেল কে দেখান হচ্ছিলো। আসলে এই ট্যুরটা সবার রিল্যাক্স ট্যুর থাকলেও হিমেল এর জন্য ছিলো শিক্ষণীয় ট্যুর। সাত জন বড় ভাই কে সামনে পেয়ে সে অনেক শিক্ষা (!!!) লাভ করেছে। যে ছেলে জীবনে ঠিক মতো চা খায় নাই কোনোদিন সে এখন নিজে থেকে চা এর কথা বলে।
সিনেমা দেখার নাম করে বিছানা থেকে কেউ আর উঠতে চায় না, দুপুরের লাঞ্চ করলাম বিকাল ৪ টায়। কক্সবাজার আসবো আর শহরের ভিতর পৌশীতে খাবো না, তা হবে না তা হবে না।
পৌষীতে জমজমাট লাঞ্চ করে চার অন চলে গেলো রুমে আর আমরা ৮ জন চলে গেলাম আবার বিচে। আজকের আবহাওয়া পুরাই ভিন্ন, ফণী এর রুপ কিছুটা দেখা যাচ্ছে। আকাশ পুরাই কালো। নাহিদ ভাই বললো বৃষ্টি আসলে ভুলেও দৌড় দিবি না, ভিজবো। জি স্যার বলে পলিথিনে মোবাইল আর ম্যানিব্যাগ ভরে ফেললাম। সুগন্ধা পয়েন্টে ঢোকার মুখে আসার আগেই দেখি মানুষের ঢল, মনে হচ্ছে সাগর থেকে গডজিলা উঠে আসতেছে, এখন জান বাচানো ফরজ। সবাই পালাচ্ছে আর আমরা বৃষ্টির মধ্যে বিচের দিকে হেটে যাচ্ছি। চার বছরের লালিত স্বপ্ন আজকে পুরোন হলো। পনেরো মিনিটের ভিতর বৃষ্টি শেষ। বৃষ্টিতে বিচে যাওয়ার সময় হঠাত এক আপু থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো ভাইয়া আপনারা কি ইডাব্লিউইউ এর, আমার পরনে লাস্ট এলাম্নি ইভেন্টের টি-শার্ট। জানলাম উনিও ইডাব্লিউইউ এর।
কক্সবাজারে আশার প্রথম দিন থেকেই ছোট ভাই দের একটা গ্রুপ এর সাথে কথা হচ্ছিলো আমরা দেখা করবো। অবশেষে বৃষ্টির মধ্যে বিচে তাদের সাথে দেখা হলো। আয়াত আর রিজভি কে ধন্যবাদ দেখা করার উদ্যোগ টা নেয়ার জন্য। ভাল লাগা হলো তাদের সাথে সেদিনই প্রথম দেখা এবং কথা বলা।
ইয়েস, আমরাই ইডাব্লিউইয়ান.....
বৃষ্টির ভিতরেই চললো টিমবিল্ডিং এবং ছবি তোলা। দ্বিতীয় দফায় বৃষ্টিতে ভিজে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে চলে আসলাম হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে আবার বের হতে হবে, ট্যুরের অন্যতম আকর্ষন বারবিকিউ পার্টি, স্পন্সর আমাদের শাফিউল ভাই।
পার্টি শেষে আবার বিচে গিয়ে রাত একটা পর্যন্ত আড্ডা। আশে পাশে কেউ নেই, অমাবশ্যা রাতের আধারে বালুর উপর কয়েকজন যুবক.........
হোটেলে ফিরতে ফিরতে বুঝলাম বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে। রাত পোহালেই ঢাকাগামী বাসে উঠতে হবে। আবার হয়তো আশা হবে, এবারের থেকেও বেশি মজা হবে, কিন্তু প্রতিটা ট্যুরের আলাদা আলাদা গল্প থাকে থাকে ভাল লাগা। এভাবে বড় ভাইদের সাথে এরকম একটা স্মৃতিময় ট্যুর হবে কোনও দিন ভাবিও নি। নাহিদ ভাই, রাসেল ভাই, সাফি ভাই, ইয়াসিন ভাই, তুহিন ভাই, পিচ্চি হিমেল, নাসিফ, সানজিত, মাশরুর, অমিত ইনশাল্লাহ আবার হবে.........
Comments
Post a Comment