মেঘের রাজ্য সাজেক ট্যুর প্লান (দুই দিনের জন্য)
সাজেক
এখন বাংলাদেশের
অন্যতম জনপ্রিয় ট্যুরিষ্ট স্পট। যারা একটু রিলাক্স করে এবং বন্ধু বান্ধব নিয়ে অথবা পরিবার নিয়ে দুইটা দিন সময় কাটাতে চান আবার কিছুটা অ্যাডভেঞ্চারও চান তাদের কাছে সাজেক দিন দিন
জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাই তাদের কথা মাথায় রেখে দুই
দিনের ট্যুর প্লান টা করা হল। আমার
এক ছোট ভাই Jawad Abdullah
বুয়েটে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে ঘুরে আসতে চাচ্ছে, আসলে তার অনুরোধেই প্লান টা করা। আমি
আমার অভিজ্ঞতার আলোকে প্লান করেছি, কারো কোন কারেকশন থাকলে কমেন্ট এ বলবেন প্লিজ।
- পর্যাপ্ত পরিমান মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাথে রাখুন।
দিন ০: ঢাকা থেকে রাতের বাসে খাগড়াছড়ি রওনা
দিতে হবে, সাপ্তাহিক ছুটি তে গেলে
চেষ্টা করতে হবে রাত ৯ঃ০০ টার মধ্যে রওনা দিতে তাহলে ভোরেই পৌছে যাওয়া যাবে খাগড়াছড়ি। হানিফ এসি বাস
১০০০ টাকা, সেন্ট মার্টিন পরিবাহন ৯০০ টাকা। নন এসি বাস
ভাড়া নিবে ৫২০ টাঁকা করে,
এস আলম, শ্যামলি, ইকোনো এর সার্ভিস
ভাল। শান্তি পরিবহন এর গাড়ি গুলাও ভাল,
কিন্তু শান্তি পরিবহন তাদের জন্য যারা দীঘিনালা পর্যন্ত যেতে চান। আমার মতে খাগড়াছড়ি
তে নামাই ভাল।
দিন ১ঃ খাগড়াছড়ী তে
ভো্রে নেমেই খেয়ে নেয়া ভালো।
এইখানে এসে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে
হবে কি করবেন। এখানে অপশন দুটি, কারন সাধারনত যারা সাজেকে যান তারা সাজেকের সাথে সাথে খাগড়াছড়িতেও আরও কিছু জায়গা
ঘুরে দেখেন।
যেগুলা
হচ্ছে,
- হাজাছড়া ঝর্না
- রিসাং ঝর্না
- আলুটিলা কেইভ
- তাড়েং
- জেলা পরিষদ পার্ক
এর
মধ্যে পরের দুইটা খাগড়াছড়ি শহর থেকে কাছেই অবস্থিত, তাই যদি প্রথম দিনেই যেতে চান তাহলে
এক রকম প্লান আর যদি
ফেরার দিন খাগড়াছড়ি শহরে আগে ফিরে পরে রিসাং ঝর্না আর আলুটিলা কেইভে যেতে চান তাদের
জন্য আরেক রকম প্লান। এইখানে
আরেকটা জিনিষ মাথায় রাখতে হবে। অনাকাংখিত ঘটনার কারনে বাঘাইহাট থেকে এখন আর্মি এসকোর্ট
ছাড়া সাজেক যাওয়া যায়না। আর
এই এসকোর্ট পাওয়া যায় দুই সময়। সকাল ১০ঃ০০ টায়
আর বিকাল ৩ঃ০০ টায়।
তাই প্লান এমন ভাবে করতে হবে যেন এই দুইসময়ের যে কোন একসময়ে বাঘাইহাট এ থাকা যায়।
তাই দুইভাবেই প্লান দেওয়া হলঃ
#সুপার প্ল্যানঃ
সকালে
খাওয়া দাওয়া সেরে নিয়েই একটা চান্দের গাড়ি ভাড়া করে নিন, শাপলা চত্বর বলে একটা জায়গা
আছে, সেখানে গেলেই অনেক চান্দের গাড়ি পাওয়া যাবে,
তাদের কে বলবেন আজকে সাজেক নিয়ে যাবে কালকে সাজেক থেকে নিয়ে আসবে, তারপর শহরে রিসাং,
আলুটিলা ঘুরিয়ে নিয়ে বাস ষ্টেশন এ নামিয়ে দিবে। এইখানে
আপনারা ইচ্ছা মতো দর
দাম করতে পারবেন না, ৯,৭০০ টাকা এর
মধ্যেই পেয়ে যাবেন আশা করি। তারপর
রওনা দেন সাজেকের উদ্দেশ্যে, পথে হাজাছড়া ঝর্না পড়বে, হেল্পার কে বলবেন যেন সেখানে
নামিয়ে দেয়, দীঘিনলা পার হয়ে কিছুখন গেলেই এই সুন্দর ঝর্না টী। মূল রাস্তা থেকে ১০-১৫
মিনিট হাটলেই এই ঝর্না টী পাওয়া যাবে। ঝর্নায় কিছুক্ষন ভিজে ১০ টার আগেই চলে যান বাঘাইহাট
এ। সেখান থেকে আর্মি এসকোর্ট নিয়ে সাজেকে। কম বেশি তিন ঘণ্টা লাগে খাগড়াছড়ী থেকে সাজেকে
যেতে। যাওয়ার পথ টা আসলেই অনেক সুন্দর, পুরোপুরি উপভোগ করার জন্য চান্দের গাড়ির ছাদ
উপযুক্ত জায়গা। সাজেকে গিয়ে আগে থেকে বুকিং করা রিসোর্ট এ ঊঠে যান। আগে থেকে খাওয়ার
অর্ডার দিতে হবে না হলে খাবার পাবেন না, খাওয়া দাওয়া করে রেষ্ট নিন। এরপর সাজেকে ঘুরে
বাকি সময় কাটাতে হবে। সেখানে ঘুরা ঘুরি করতে পারেন, হ্যালি প্যাড এ, সূর্যাস্ত দেখতে
পারেন সেখান থেকে, খুব ভাল লাগবে, এ ছাড়া সাজেকের রাস্তায় হেটে বেড়াতেও ভাল লাগবে তা
নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। একটু আগে ঘুমিয়ে পড়বেন, কারন মনে রাখবেন, সাজেকের মেইন আকর্ষন
হল সূর্য উঠার আগে হ্যালিপ্যাড এ গিয়ে মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে।
দিন
২ঃ সকালে সূর্য উঠার ঘন্টা আগে ঊঠেই চলে যান হ্যালিপ্যাড এ, গিয়ে উপভোগ করেন সাজেকের
সৌন্দর্য। উপভোগ করুন সূর্যোদয়। সূর্য ঊঠে গেলে কিছুক্ষন পর রওনা দিন, কংকাল পাড়ার
দিকে।বেশ কিছুক্ষন উচু নিচু পাহাড়ে হেটে পৌছে যাবেন কংলাক পাড়ায়, ভাল লাগবে, কংলাক
পাড়া থেকে কটেজে ফিরে সব গুছিয়ে ১০ টার আগেই রেডি হয়ে যান রওনার জন্য কারন ১০ টার পর
আবার ৩ টার আগে বের হতে পারবেন না। আর্মি এসকোর্ট করে আবার নিয়ে আসবে বাঘাই ঘাট।
এরপর
দুপুরের মধ্যে পৌছে যাবেন খাগড়াছড়ী তে। পৌছে লাঞ্ছ করে নিন, মন টানায় করতে পারেন অথবা
খাগড়াছড়ী বিখ্যাত সিস্টেম রেস্টুরেন্ট এ। লাঞ্ছ করেই চান্দের গাড়ি করে চলে যান আলু
টীলায়, আলুটিলায় সময় কাটিয়ে চলে যান রিসাং ঝর্নায়, রিসাং ঝর্নার আরেক নাম প্যান্ট খেকো ঝর্না, কারন এইখানে
গেলে ন্যাচারাল স্লিপার এ স্লিপ কাটতে গিয়ে সবার প্যান্ট ছিড়ে যায়, তাই এক্সট্রা কাপড়
রাখবেন সাথে।রিসাং ঝর্না দেখে শহরে ফিরে এসে, বাসার জন্য কিছু কেনাকাটা করে নিন।
মনে
রাখবেন রাত ৯ টায় খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে সব গাড়ী ছেড়ে দেই, তাই এইসময়ের মধ্যে
সব কাজ শেষ করে ঊঠে পরুন ঢাকার গাড়ী তে।
প্লান বিঃ
এই প্লান এ প্রথম দিন শহরের কাজ গুলা সেরে নেওয়া
যায়, অর্থাত সকালে নাস্তা করে গাড়ি ঠিক করেই আলুটিলা আর রিসাং এ চলে যান, মাথায় রাখবেন
যে করেই হোক দুপুর তিন টায় বাঘাইহাট থাকতে হবে, আলুটিলা , রিসাং ঝর্নায় গিয়ে দেখা শেষ
করে ৩ টার মধ্যে বাঘাইহাট থেকে আর্মি এসকোর্ট নিয়ে সাজেকে চলে যান।তারপর সাজেকে গিয়ে
ঘুরা ঘুরি করে আগে ভাগে ঘুমিয়ে যান যেহেতু সকালে উঠতে হবে।
দিন
২ঃ ভো্র বেলায় ঊঠে আগের মত হ্যালিপ্যাড এ গিয়ে
তারপর কংকাল পাড়ায় চলে যান, সেখান থেকে ফিরে আসেন, এরপর আরো সময় থাকবে, যেহেতু এই প্লেনে
ব্যাক করব বিকাল ৩ টার এসকোর্ট এ। এই সময় স্থানীয় কোন গাইড কে সাথে নিয়ে চলে যেতে পারেন
সিকাম তৈসা ঝর্নায়। ট্রেকিং করে যেতে হবে সেখানে। তারপর ৩ টার এসকোর্ট এ খাগড়াছড়ী ফিরে
সদাই পাতি করে রাত ৯ টার গাড়ি তে ঢাকার গাড়ী তে ঊঠে পরেন।
Comments
Post a Comment